কোভিড ১৯ এর চিকিৎসা বিষয়ে AIIMS এ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত বিশেষজ্ঞদের মতামত

প্রশ্ন ১: আমার গত তিন দিন ধরে জ্বর, আমার কি RT PCR / Rapid অ্যান্টিজেন টেস্ট/ CABNAAT এই পরীক্ষাগুলো করানো উচিত?

এই এই সময়ের (এপ্রিল 2021) পরিপ্রেক্ষিতে অনুমান করা যায় যে আপনার কোভিড ১৯ রোগটি হয়েছে, সঠিক পদ্ধতিতে চিকিৎসা নিন। যদি সুযোগ থাকে তাহলে কোভিড ১৯ নির্ণয়ের জন্য RT PCR পরীক্ষাটি করান।যদি RT PCR পরীক্ষাটি করানোর সুযোগ একেবারেই না থাকে সেক্ষেত্রে র‌্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্ট/ CABNAAT এই পরীক্ষাগুলো করানো যেতে পারে।

প্রশ্ন ২: আমার গত তিন দিন ধরে জ্বর, আমার RT PCR টেস্টের ফলাফল কোভিড ১৯ পজিটিভ এসেছে। আমার এখন কি করা উচিত? আর কোন পরীক্ষা করাতে হবে এবং কোন কোন ঔষধ খেতে হবে?

  • প্রাথমিক চিকিৎসা:
    • একেবারেই ঘর থেকে বের হওয়া যাবেনা। বাড়ির সবাই যদি পজিটিভ হন, তাহলে আলাদা আলাদা ঘরে থাকার প্রয়োজন নেই।
    • ৬ ঘন্টা পর পর আপনার শরীরের তাপমাত্রা মেপে দেখুন। যদি ১০১ ডিগ্রীর ওপরে উঠে তাহলে ভরাপেটে একটি করে ট্যাবলেট প্যারাসিটামল ৬৫০ মিলিগ্রাম খান।
    • ৬ ঘন্টা পর পর পালস অক্সিমিটার দিয়ে আপনার রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা দেখুন। যদি মাত্রা ৯৪% এর বেশি হয় তাহলে চিন্তার কোন কারণ নেই, যদি ৯৪% এর কম হয় তাহলে বেশ কয়েকবার গভীরভাবে শ্বাস নিন এবং ছাড়ুন। (প্রাণায়ম করুন)। যতক্ষন পারা যায় উপুড় হয়ে শুয়ে থাকুন, (চিৎ হয়ে নয়) এতে আপনার অক্সিজেনের মাত্রা আগের তুলনায় বেড়ে যাবে। যদি এতে কাজ না হয় তাহলে ছয় মিনিট হাঁটুন।
      * বিশেষ দ্রষ্টব্য: সাধারণত রোগের লক্ষণ দেখা দেয়ার ৫ম থেকে ১১তম দিনে অক্সিজেনের মাত্রা কমতে থাকে। যদি উপুড় হয়ে শুয়ে অথবা ৬ মিনিট ধরে হাঁটার পরও অক্সিজেনের মাত্রা ৯৪% এর বেশি না হয় তাহলে আপনার আলাদাভাবে প্রক্রিয়াজাত অক্সিজেন গ্রহণ করতে হবে।
    • স্বাভাবিক খাদ্য গ্রহণ: স্বাভাবিক খাবার খাবেন।যদি আগে থেকে কোনও রোগের কারণে কোনও খাদ্যদ্রব্য গ্রহণে নিষেধাজ্ঞা থাকে তা মেনে চলতে হবে।
    • পর্যাপ্ত জল খেতে হবে। যেসব ব্যক্তিকে আগে থেকে কোনো রোগের কারণে সীমিত জল পান করতে বলা হয়েছে, তাদের তা মেনে চলতে হবে।
  • রক্ত পরীক্ষা:
    সাধারণত রোগের উপসর্গ কম থাকতে কোন প্রকার রক্ত পরীক্ষার প্রয়োজন নেই। যাদের উপসর্গ অত্যন্ত বেশি (যেমন: অতিরিক্ত জ্বর, অতিরিক্ত ডায়রিয়া, অতিরিক্ত ক্লান্তি ইত্যাদি) তাদের নিম্নোক্ত পরীক্ষাগুলো খালি পেটে করানো যেতে পারে
    • CBC ( Complete Blood Count )
    • CRP ( C- Reactive Protein )
    • LFT ( Liver Function Test )
  • চিকিৎসা:
    কোভিড ১৯( করোনা ভাইরাস ইনফেকশন) এর কোনও নির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই। কেবল রোগের লক্ষণ অনুযায়ী চিকিৎসা প্রদান করা হয়। যেমন:
    • জ্বর / শরীর ব্যথা / মাথা ব্যথার জন্য- প্যারাসিটামল (প্রয়োজনমতো)
    • গলা ব্যথা- লবণ গরম জল দিয়ে গড় গড়া
    • গলা খুসখুস, হাঁচি অথবা সর্দির জন্য- Tab. Cetirizine (Zyrtec) একটি ট্যাবলেট দিনে একবার করে।
    • শুকনা কাশি- Tab. Montair LC; একটি ট্যাবলেট দিনে একবার করে
    • আদ্র কাশি- (কাশির সাথে কফ বেশি থাকলে) Bro-zedex syrup; ১ থেকে ২ চা চামচ দিনে তিনবার।
    • পাতলা পায়খানা
      • Electral Oral Rehydration Powder যতবার পায়খানা হবে ততবার খেতে হবে
      • Tab. Imodium 2 mg. অনেক বেশি পাতলা পায়খানা হলে খেতে হবে।
      • অন্তত দিনে একবার টক দই খেতে হবে
      • যথাসম্ভব হালকা খাবার গ্রহণ করতে হবে।
    • সাধারণ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করার জন্য একটি করে Tab. Zinc 50mg. ১৫ দিনের জন্য সেবন করতে হবে।
  • যাদের আগে থেকেই অন্যান্য রোগের যেমন স্থূলতা, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, শ্বাসকষ্ট, কিডনির রোগ ধূমপায়ী, দীর্ঘদিনের বক্ষব্যাধি, ফুসফুসের যক্ষা ইত্যাদির ইতিহাস রয়েছে তারা আগের মতই উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, থাইরয়েড রোগ, শ্বাসকষ্ট, ক্যান্সার, আথ্রাইটিস ইত্যাদি ওষুধ সেবন করুন। সেইসঙ্গে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী নিম্নোক্ত পরীক্ষাগুলো করানো যেতে পারে-
    • Serum Ferritin
    • LDH
    • D-Dimer
    • Interleukin 6.
    এই পরীক্ষাগুলো করাতেই হবে এমন নয়। যাদের বয়স ৭০ বছরের বেশি অথবা যাদের ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ বা কিডনির রোগ আছে তাদের অবশ্যই পরীক্ষাগুলোর সাথে নিচের পরীক্ষাটিও করাতে হবে KFT (Kidney Function Test)
  • HRTC chest এর প্রয়োজনীয়তা-
    যাদের রক্তের অক্সিজেন লেভেল ৯৪% এর বেশি তাদের HRTC chest করানোর দরকার নেই। তখনই করানো যেতে পারে যদি অক্সিজেনের লেভেল অনবরত ৯৪ % এর কম থাকে। CT Score নিয়ে অযথা চিন্তা করার প্রয়োজন নেই, কেবল যাদের ক্ষেত্রে প্রয়োজন তাদেরই টেস্ট করানো যেতে পারে।
  • নোট:
    • Fabiflu (Favipiravir) Doxycycline, Ivermectin, Azithromycin এই ওষুধগুলো কোন কার্যকরীতা এই রোগের ক্ষেত্রে দেখা যায়নি। তাই এই ওষুধ খাবেন না বা দিবেননা। বরং বিভিন্ন পার্শপ্রতিক্রিয়া কারণে রোগীর ক্ষতি হতে পারে। ওষুধ গুলোর সাধারণ পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হলো: বমি বমি ভাব, বমি, পেটে ব্যথা, পাতলা পায়খানা। দুর্ভাগ্যজনকবসতো কোভিডের লক্ষণগুলো একই রকম।
    • যাদের অক্সিজেন লেভেল স্বাভাবিক আছে, তাদের জন্য স্টেরয়েড ( Medrol/ Dexona) ব্যবহার করা নিষেধ এবং বিপদজনক। কেবলমাত্র যাদের তিন লিটারের বেশি অক্সিজেন প্রয়োজন তারাই মাত্র পাঁচ দিনের জন্য এই ওষুধগুলো খেতে পারে। তবে আগে থেকে খাওয়া যাবেনা কারণ তাতে পরিস্থিতি আরো খারাপের দিকে যেতে পারে, এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।
    • এমনকি Inj. Remdesivir অথবা আরোগ্যলাভ কারীর রক্তের প্লাজমার এক্ষেত্রে প্রমাণিত কোন ভূমিকা নেই। তাই এগুলোর যোগাড় করতে না পারলেও চিন্তার কোন কারণ নেই। এগুলোর কোনোটিই শেষ পরিণতিকে পরিবর্তন করতে পারে না।
    • রক্তপরীক্ষা অথবা HRCT এর ফলাফলের চেয়ে জরুরি হলো রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা যা আঙুলে অক্সিমিটার দিয়ে দেখা হয়। এটাই কোভিড ১৯ ব্যবস্থাপনার চাবিকাঠি।

** সতর্কীকরণ: এই লেখাটি রোগী এবং তাদের পারিবারিক ডাক্তারদের জন্য প্রস্তুতকৃত সহজ এবং প্রাথমিক নির্দেশনা। এটি প্রস্তুত করা হয়েছে AIIMS এ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ৫ জন বিশেষজ্ঞদের মতামত অনুযায়ী যারা ৪০ বছরের উপরে অভিজ্ঞতার সম্পন্ন।কোভিড ১৯ আক্রান্ত রোগীর উচিত একজন চিকিৎসকের কাছে আলাদা ভাবে চিকিৎসা নেয়া।

** কিভাবে অক্সিজেন লেভেল পরিমাপ করতে হয়? অক্সিমিটারকে ডান (প্রধান) হাতের মধ্যমায় পরান। প্রথমে পরিবারের অন্য সদস্যদের বা সেবাপ্রদানকারীর আঙুলে পরীক্ষা করে অক্সিমিটার এর কার্যকারিতা নিশ্চিত হন। বিশ্রামে থাকা অবস্থায় এবং ছয় মিনিট ধরে হাঁটার পর উভয় অবস্থায় মাপতে হবে। যারা ছয় মিনিট হাঁটতে পারবেন না তাদের অন্তত তিন মিনিট হাটার চেষ্টা করা উচিৎ। .

Keep yourself informed